মারুতি কোম্পানির ভ্যান গাড়ি। মারুতি ওমনি। আপনারা প্রত্যেকেই এই গাড়িটির সাথে পরিচিত।

 মারুতি কোম্পানির ভ্যান গাড়ি। মারুতি ওমনি। আপনারা প্রত্যেকেই এই গাড়িটির সাথে পরিচিত।


যাত্রীবাহী, মালবাহী থেকে শুরু করে এম্বুল্যান্সের কাজ পর্যন্ত চালানো হয়েছে এই গাড়ি দিয়ে। কালের বিবর্তনে আধুনিক সব গাড়ির ভিড়ে এখন প্রায় লুপ্ত। কিন্তু বিশালগড় কামথানা রোডে এই গাড়ির চলন নতুন ভাবে শুরু হয়েছে আজ প্রায় এক বছর ধরে। এখন এই গাড়ির নতুন কাজ চিনি বহন করা। আগরতলা থেকে টনে টনে আসা চিনি বিশালগড়ের নিচের বাজার থেকে এই মারুতি ভ্যান করেই পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তে। আর সেখান থেকে কাটা তারের ওপারে ভারতের চিনি তার অবৈধ গন্তব্যস্থল বাংলাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে।


এই খবর নতুন নয়। ইহা আজ ওপেন সিক্রেট। চিনির অবৈধ পাচার এই মুহূর্তে এই রাজ্যের অন্যতম দুই নাম্বারের ব্যবসা । দুই নাম্বার মানে তো আপনারা বোঝেন আশা করি। স্থানীয় চুনোপুটি নেতা, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছায় এই অবৈধ ব্যবসার গোপন রফা। নয়তো এত খবর হবার পরেও কেন বন্ধ হয় না এই অবৈধ ব্যবসা.?


তবে এই ব্যবসার ফলে নতুন কাজ পেল মারুতি কোম্পানির লুপ্তপ্রায় সেই ভ্যান গাড়ি। দশ চাকা, বারো চাকার লড়ি হয়ে বিশালগড় নিচের বাজারের অগণিত গোডাউনে পৌঁছায় হাজার হাজার বস্তা চিনি। আর সেই গোডাউন থেকে নাম্বার রেজিস্ট্রেশন হীন কয়েকশ মারুতি ভ্যান করে চিনির বস্তাগুলি পৌঁছে যায় বাংলাদেশের সীমান্তে। এমনিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে আপনার বাইক ও গাড়ির কাগজপত্র দেখে ফাইন করতে বড্ড মজা পায় পুলিশ বাবুরা। কিন্তু বিশালগড় কামথানা রোডে চলা এই মারুতি ভ্যানগুলির একটারও বৈধ কাগজ নেই। না আছে রেজিস্ট্রেশন, না আছে ইন্সুরেন্স, না আছে ফিটনেস। তারপরেও পুলিশের নাকের ডগায় একশ কিলোমিটারের গতিতে সরু রাস্তা দিয়েই চিনির বস্তা নিয়ে সীমান্তে পারি দিচ্ছে কয়েকশ ভ্যান গাড়ী। এই গাড়ির নিচে এসে প্রাণও হারিয়েছে পথচারী। আরও হারাতে পারে । কিন্তু বিচার হবে না। কারণ, কারণ হচ্ছে সেই কাটমানি। যা সময়মত পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ থেকে শুরু করে মন্ত্রী পকেট পর্যন্ত। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি বিশালগড় ট্রাফিক ও পুলিশ প্রশাসনকে এই গাড়ি গুলির কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করা হোক । বিশালগড় কামথানা, অরবিন্দনগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার অনেকেই কোনমতে ২০ - ৩০ হাজার টাকা যোগাড় করে একটি মারুতি ভ্যান গাড়ী কিনে নিচ্ছে। কিচ্ছু লাগবে না, রেজিস্ট্রেশন, ইন্সুরেন্স কিচ্ছু না। শুধু চললেই চলবে। তাতেই গাড়ি কিনে নিচ্ছেন তারা। আর কিনেই খুলে ফেলছে গাড়ির পেছনের বসার সিটগুলো। কারণ ঐগুলো খুলে নিলেই একটি মারুতি ভ্যানে জায়গা হয় ২০ টি চিনির বস্তা। প্রতি বস্তা ভাড়া ১০০ টাকা হিসেবে এক ট্রিপে ভাড়া হয় ২০০০ । আর এমন দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি ট্রিপ দিতে পারে প্রতিটি গাড়ি। সেই হিসেবে দিনে কামাই ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসিক প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা কামাই একটি মাত্র ২০ হাজার টাকার মারুতি ভ্যান কিনে। মারুতি ওমনি গাড়ি তার জীবনের ইনিহাসে এতটা কামাই দিতে পারেনি তার মালিকদের। ২০২৩ - ২৪ সালে এসে বিশালগড় কামথানা রোডে সেই মাইলস্টোন ছুঁল মারুতি কোম্পানির এই ঐতিহাসিক গাড়িটি। কোম্পানির মালিকের কাছে এই খবরটি পৌঁছানো সম্ভব হলে হয়তো তিনি নিজে এসে ঘুরে যেতেন বিশালগড় কামথানা রোডের মারুতি ওমনির স্বর্ণযুগ। পুলিশ, প্রশাসন, সরকার কেউই চাইছে না অবৈধ এই ব্যবসায় লাগাম টানতে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে এই বিষয়টি আছে কিনা, তাও ভাবার বিষয় । মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী । অতিসত্তর এই বিষয়ে তদন্তের আদেশ করা দরকার। কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গাড়িগুলি কিভাবে রাস্তায় চলছে ? কিভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা চিনি বাংলাদেশে অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে .? কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে রাজ্যের অর্থনীতিকে দুর্বল করে কিভাবে অবাধে এই পাচার বাণিজ্য চলছে ? কেন এতগুলো বিষয়ে আইন ভঙ্গ হবার পরেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ? এর উত্তর কে দেবে..? কার দায়বদ্ধতা ..? কাগজপত্রহীন এই গাড়িগুলোর চাপায় পরে প্রাণ হারালে বা দূর্ঘটনার কবলে পড়লে তার দায়ভার কে নেবে..? এইসকল প্রশ্নগুলোর উত্তর কি আছে পুলিশ ও সরকারের কাছে.? আপনারাও কি সরকারকে করতে চান এই প্রশ্নগুলো ...? করতে চাইলে এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ