সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকা মারফত জানা যায় রাজ্য সরকার মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টারকে তাজ হোটেল গ্ৰুপের হাতে তুলে দিতে চাইছে একটি স্টার হোটেল বানানোর জন্য।
এর আগেও দেখলাম আমরা স্মার্টসিটির রাস্তার পরিসর বাড়ানোর জন্য পোষ্ট অফিস চৌমুহনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কামান টিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
অথচ এটিকে রেখেই রাস্তা বড় করা যেত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধীতা সহ শহরের বিশিষ্ট জনদের বিরোধীতা স্বত্বেও সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে সরিয়ে নিয়েছে স্মৃতি স্তম্ভটিকে। এখন আবার রাজ্যের কৃষ্টি সাংস্কৃতিক বিসর্জন দিয়ে পাহাড়ী বাঙালীদের আবেগ জড়িত মাণিক্য রাজাদের অতিথি শালাকে ধ্বংস করে তাজ হোটেল বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ এর সামনেই আছে আন্তর্জাতিক মানের একটি হোটেল। সরকার হোটেল বানাবে রাজ্যের উন্নয়নে এতো ভালো কথা।অন্যত্র জায়গা পছন্দ করে তাজ হোটেল বানানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি করছি। কারণ এই পুস্পবন্তের সাথে যেমন মাণিক্য রাজাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তেমনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগও জড়িয়ে আছে।যার আরেকটি নাম ছিল কুঞ্জবন প্রাসাদ নামে পরিচিত। এটি ছিল মাণিক্য রাজাদের অতিথি শালা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বারের মতো ১৯২৬ সালে ত্রিপুরা রাজপরিবারের আমন্ত্রণে আসেন তখন মাণিক্য রাজাদের এই অতিথিশালা তেই কবি ছিলেন।আর তখনই বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্যের অনুরোধে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের নামের সাথে মিল রেখে কুঞ্জবন প্রাসাদের নাম রাখেন পুস্পবন্ত প্রাসাদ। এই প্রাসাদটি একশত বছরের পুরনো ঐতিহ্য।১৯৪১ সালের মে মাসে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০ তম জন্মদিন পালন করেছিলেন। এখানে সুরক্ষিত আছে রাজ পরিবারের অনেক পুরনো স্মৃতি।যা ত্রিপুরা রাজ্যের গর্ব।১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা রাজ্য ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত হওয়ার পর ৪/৩১ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই প্রাসাদটি প্রধান কমিশনারের বাংলোতে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পেলে এই পুস্ত্রবন্ত হয়ে উঠে রাজভবন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এখান থেকেই রাজভবনের কার্যক্রম চলতো। এবং এর দক্ষিণ দিকের অংশে বাম আমলে রবীন্দ্র কানন গড়ে তোলা হয়। রাজভবন চলে যাওয়ার পর ১৪ ই অক্টোবর ২০২২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু পুস্পবন্ত প্রাসাদটিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কৃষ্টি সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য এটিকে ডিজিটাল জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন করেন।এর নামকরণ করা হয় প্রাসাদটির নির্মাতাকে সন্মান জানিয়ে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টার। তাই রাজ্যের এমন একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা জাতি জনজাতিদের মিলনায়তন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্টান কে ধ্বংস করে তাজ হোটেল বানানোর তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে। তৎসঙ্গে রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নয়নে তাজ হোটেল শহরের পাশ্ববর্তী স্থানে বানিয়ে রাজ্যের মান উন্নয়ন করুক আমরা চাই। রাজ্যের উন্নয়নে ও জনগণের উন্নয়নে আমরা বাঙালী দল সব সময় সহযোগিতা করবে। আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল মহাশয়। দুলাল ঘোষ, অশোক কুমার দাস সহ আমরা বাঙালী দলের অন্যান্য প্রতিনিধিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ