কাঞ্চনমালা প্রতিনিধি: নাবালিকা মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য একাংশ অভিভাবকরাই দায়ী , তারই এক জলজ্যান্ত উদাহরণ মিলল আমতলী থানার অন্তর্গত কাঞ্চনমালা এলাকায়। কাঞ্চনমালা এসবি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে কাঞ্চনমালা এসবি স্কুল সংলগ্ন প্রাক্তন পুলিশ কর্মী বীরকুমার ভৌমিকের কলেজ পড়ুয়া ছেলে সৌরভ ভৌমিকের সাথে গোপনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদিও সৌরভ ভৌমিক জানতো যে তার প্রেমিকা নাবালিকা অর্থাৎ অবুঝ। সবকিছু জেনে বুঝেই ওই নাবালিকা মেয়েটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং পরে ধীরে ধীরে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে মেয়েটির সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে নাবালিকা মেয়েটির মাকে ম্যানেজ করে নেয়। এরপর সৌরভ ভৌমিক মেয়েটি স্কুলে আসলে সুযোগ বুঝে মেয়েটির সাথে দেখা করতে এবং কথাবার্তা বলতো ।
নাবালিকা মেয়েটির সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলার জন্য সৌরভ ভৌমিক নাকি দামি আইফোন কিনে দিয়েছে যা নাবালিকা মেয়েটির বাবা না জানলেও মেয়েটির মা অবশ্যই জানত। এতেই শেষ নয় স্থানীয় এলাকাবাসীদের কাছ থেকে জানা গেছে সৌরভ প্রায়ই নাবালিকা মেয়েটির বাড়িতে যেত। এদিকে ধীরে ধীরে স্থানীয় এলাকাবাসীরা তাদের এই সম্পর্কের কথা জেনে যায় এবং এলাকার অনেকেই একাধিকবার নাবালিকা মেয়েটির সাথে মেলামেশা করতে দেখে। এরই মধ্যে গত রবিবার অর্থাৎ সরস্বতী পূজার প্রথম দিনে এই নাবালিকা মেয়েটি কাঞ্চনমালা এসবি স্কুলে সরস্বতী পূজা দেখে বাড়ি ফেরার পথে নাবালিকা মেয়েটির মায়ের সামনে থেকেই সৌরভ ভৌমিক তার ভাইকে বসিয়ে নাবালিকা মেয়েটিকে নিয়ে যায়। পরদিন অর্থাৎ সোমবার সকালে গোটা এলাকায় এই খবর চাউল হতেই সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। পরে কাঞ্চনমালা এস বি স্কুলের এস এম সি কমিটির পক্ষ থেকে নাবালিকা মেয়েটির পরিবারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে প্রথমে তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে এবং পরে নাবালিকা মেয়েটির মা দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে অর্থাৎ নাবালিকা মেয়েটির মা জানিয়ে দেয় তাদের মেয়ে বিষয়টি তারা বুঝবেন এখানে কেউ যদি এই ব্যাপারে সমালোচনা করে তাদের মুখ নাকি সেলাই করে দেবে। ঘটনার বেগতিক বুঝতে পেরে সৌরভ ভৌমিক পরদিন অর্থাৎ সোমবার বিকেলে নাবালিকা মেয়েটিকে পুনরায় আবার বাড়িতে এনে রেখে যায়। পরে বিদ্যালয় এবং এলাকার সম্মানের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি লিখিত আকারে জানানো হয় রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনে। জানানো হয় সদর মহকুমা শাসক সহ সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রীকেও। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের সদস্য গৌতম কুমার শীল, মৈত্রী দেব দত্ত এবং ঝুমা শীল আমতলী থানার পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ছুটে আসেন নাবালিকা মেয়েটির বাড়িতে। তারা এদিন নাবালিকা মেয়েটি সহ তার পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলে। সেদিন শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের সদস্যদের প্রশ্নের মুখে নাবালিকা মেয়েটির মা তার নিজের ভুল স্বীকার করে। পরের শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের সদস্যরা পরিষ্কারভাবে নাবালিকা মেয়েটির মাকে জানিয়ে দেয় ভবিষ্যতে যদি এই নাবালিকা মেয়েটিকে ওই যুবকের সাথে মেলামেশা করতে প্রশ্রয় দেওয়া হয় তাহলে কমিশন নাবালিকা মেয়েটির পরিবারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো কি করে একজন মা তার নিজের সন্তানের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যে মা তার নাবালিকা শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দেখবে সেই জায়গায় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সপ্নে মগ্ন সেই ধরনের মা থেকে কি আশা করবে সন্তানরা! ওই নাবালিকা মেয়েটির মায়ের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে সচেতন অভিভাবকরা লজ্জিত। তাই এখন থেকে এই ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করতে কাঞ্চনমালা এস বি স্কুলের এস এম সি কমিটি সহ স্থানীয় এলাকাবাসীরা কোমর বেধে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ