প্রেস বিবৃতি, ,৫/১০/২৫ ইং।আজ বাঙালী ছাত্র যুব সমাজের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় রাজ্য কার্যালয়ে।
বাঙালী ছাত্র যুব সমাজের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র সচিব বিপ্লব দাস ও যুব সচিব রামকৃষ্ণ শীল সহ আরো কয়েকজন ছাত্র যুব নেতৃত্ব। বাঙালী ছাত্র যুব সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বছরে ৫০ হাজার চাকরি দেবে বলেছিল। তাছাড়া ১০৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দেবার কথা ও বলেছিলেন। তাছাড়া রেগার মজুরি দ্বিগুণ করবে ভিশন ডকুমেন্টে বলেছিল। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে। জিনিস পত্রের দাম কমবে। এমন বহু লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। অথচ আজকে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ত্রিপুরায় ২০০০; মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত সরকারের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২০ হাজারের মতো চাকরি হয়েছে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট মিলে। অথচ বহু শূন্যপদ খালি পড়ে রয়েছে। আজকে অফিস কাছারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরক্ষা দপ্তর থেকে শুরু করে হাসপাতাল সহ বিভিন্ন দপ্তর কর্মী স্বল্পতায় ভুগছে। আজকে রাজ্যের রেফারেল হাসপাতাল জি বি চলছে ইন্টার্ণ ও পি জি র ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে। ২০০০ মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার পর ও বাকি স্কুল কলেজে গুলো শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পুরো ক্লাস পর্যন্ত হয়না।আর বিদ্যাজোতির অবস্থা তো আরো করুণ অবস্থা। সরকার বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিলেও বিদ্যাজোতি প্রকল্পে মাতৃভাষা একেবারে উপেক্ষিত। এমনকি ইংরেজি অনুবাদ গুলো পর্যন্ত নিজের মাতৃভাষায় পড়তে পারে না। চাকরি দেবার ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য এখন কেন্দ্রীয় সরকারের ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বেকারদেরকে আত্মনির্ভর হবার পরামর্শ দিচ্ছেন অথচ বেকাররা কি ভাবে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে সেই পথ কিন্তু বলে দিচ্ছেন না। তারা যখন বিরোধী আসনে ছিলেন তখন এফ ডি আইয়ের বিরোধীতা করে বলেছিলেন তা চালু হলে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়বে। অথচ এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বড়লোকদের স্বার্থ সুরক্ষায় বেশি ব্যাস্ত। যারা ক্ষমতায় আসার আগে বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করবে বলেছিল। অথচ তাদের আমলে আরো কালোধন বিদেশে পাচার হচ্ছে।আজকে অনলাইন ব্যাবসার অনুমতি দেওয়ার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসায়ী একেবারে পথে বসেছে। এরপর আছে বড় বড় শপিং মলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছোট ছোট ব্যাবসায়ীরা টিকে না থাকতে পেরে ব্যাবসা বাণিজ্য ছেড়ে টমটম চালাচ্ছে। কেউ কেউ শপিং মলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। যারা আত্তনির্ভর ভারত গড়ার উপদেশ দেয় তারাই আজ বিদেশী জিনিস বিদেশী খাবার বিদেশের চিকিৎসা পরিসেবা বেশি গ্ৰহণ করে।বড় বড ব্যাবসায়ীর সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে বহু ছোট ছোট ফ্যাক্টরি কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার এই সরকার স্বচ্ছ ভারত গড়ার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপনের জন্য। অথচ দূষণ মুক্ত পরিবেশ দপ্তর থেকে পরিবেশ নির্মূল রাখার জন্য ফ্লেক্সের ব্যবহার কম করার জন্য বলা হয়েছে। অথচ এই সরকার শুধু নিজেদের আত্মপ্রচার করার জন্য দলীয় ভাবধারা প্রচারের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্ৰহণ করে জনগণের উন্নয়ন খাতের লাখ লাখ টাকা খরচ করছে। এখন এই রাজ্য আসল কাজের চেয়ে প্রচারের কাজে বেশি জোর দিয়ে রাজ্য জুড়ে ফ্লেক্সের মাধ্যমে প্রচার করে পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসে নেশামুক্ত রাজ্য গড়ার অঙ্গীকার দিয়ে আজ নেশার স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে এই ছোট্ট ত্রিপুরাকে।আজ কোরেক্স কফ সিরাপ ড্রাগসের মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক নেশা অহরহ বিক্রি হচ্ছে।আজ প্রতিদিন রাজ্যের কোথাও না কোথাও নেশা ধরা পড়ছে।অথচ নেশা কারবারীদের তেমন ভাবে ধরতে পারছে না। এই সরকার ত্রিপুরা বাসীদের ভালো ভাবে বাঁচার কোন দিশা দেখাতে পারছে না।এর মূল কারণ হলো সরকারের কাছে কোন আদর্শ নেই। শুধু কিছু ভাবাবেগ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তাই সরকারের কথার সাথে, ভাষণের সাথে কাজের কোন মিল নেই। শুধু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু কাজ করছে। তাই দেশের যুব সমাজ আজ দিশেহারা। বেকারত্বের জ্বালায় যুব সমাজ নেশার কবলে ঝুঁকছে। যারা আজ আত্মনির্ভর ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখায় তারা রাজ্যের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কমিশন বাণিজ্য হাতানোর জন্য বহিরাগত কোম্পানির সাথে চুক্তি করে স্কুল ড্রেস শিক্ষা সামগ্রী অফিস সামগ্ৰী বই এমন আরও বহু জিনিস নিয়ে আসছে।আর এর ফলে রাজ্যের ব্যাবসায়ী ছোট খাটো ফ্যাক্টরি কলকারখানা বন্ধ হবার পথে।উল্লেখিত পরিস্থিতিতে হতাশাগ্ৰস্ত দিশাহীন ছাত্র যুব সমাজকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঙালী ছাত্র যুব সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু দাবি রাখছি অবিলম্বে পূরণের জন্য।দাবি গুলো হল
১) অবিলম্বে বিভিন্ন সরকারি ডিপার্টমেন্টের শূন্যপদ গুলো পূরণের মাধ্যমে বেকারদের চাকরীর ব্যবস্থা করতে হবে।
২) ত্রিপুরার কাঁচামাল কে কাজে লাগিয়ে ছোট ও মাঝারি কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে।
৩) অবিলম্বে ত্রিপুরার লাইফ লাইন বিকল্প জাতীয় সড়কের মান উন্নয়ন করতে হবে।
৪)রাজ্য সরকারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাজ্যের ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করতে হবে।
৫) বেকারদের আত্মনির্ভর করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্ৰহণ করে সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) অবিলম্বে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
৭) অবিলম্বে সরকারী ও বেসরকারী স্তরে ধ্রুপদী ভাষা বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ