বর্তমানের শিক্ষিত এই সভ্য সমাজে একাংশ সন্তানরা তাদের মা বাবার প্রতি দায়িত্ব ভুলে গিয়ে মা-বাবার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এমন কি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় অর্থাৎ একাংশ মা-বাবা তাদের সন্তানদের দ্বারা নিজের অধিকার থেকে বিতাড়িত হচ্ছে
ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই শিক্ষিত সমাজে এমন কিছু সন্তান রয়েছে যাদের দেখলে যেকোনো কারুরই আন্দাজ হবে যে এখনো দুনিয়ায় এমন মানুষ রয়েছে যারা মা-বাবাকে ভগবানের মতো পুজো করে। ঠিক এমনই একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ উঠে আসলো উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগর আলগাপুর ৩ নং ওয়ার্ড থেকে। ওই এলাকার সুধারানী রায় উনার ছেলে অমলেন্দু রায়ের সেবাযত্নে বেশ সুখেই রয়েছেন। জানা গেছে সুধারানী রায়ের স্বামী ননীগোপাল রায় গত ৩৫ বছর আগে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর সুধারানী রায় মানুষের বাড়িতে কাজ করে খেলে অমলেন্দু রায়কে মানুষ করে তুলেছেন। বর্তমানে বৃদ্ধা সুধারানী রায়ের বয়স ১০০ বছর। বর্তমানে বয়সের ভারে বৃদ্ধা সুধারানী রায় বিছানায় শয্যাশায়ী। বর্তমানে ছেলে অমলেন্দু রায় তার বৃদ্ধ া মাকে এমনভাবে সেবা যত্ন করছেন যে সেবা যত্ন শিশুকালে তার মা তাকে করেছিলেন। অমলেন্দু রায় তার মাকে একটি ছোট্ট শিশুকে যেভাবে সেবা-যত্ন করা হয় ঠিক সেই ভাবে সেবা-যত্ন করতে দেখা গেছে। কখনো অমলেন্দু রায় তার মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে কখনো তার মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বাবা বলে ডাকছে, মা এবং ছেলের প্রতি এই আদর ভালবাসা দেখলে মনে হয় যেন অমলেন্দু রায়ের ছোট্ট সন্তানকে সে সেবা যত্ন করছে। অমলেন্দু রায়ে একটি ক্যাটারিং এর ব্যবসা রয়েছে। ক্যাটারিং এর ব্যবসা থেকে যা টাকা রোজগার হয় তা নিয়েই অমলেন্দু রায় তার স্ত্রী সহ দুই সন্তান এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে খুব সুখে জীবন যাপন করছেন। ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমেও অমলেন্দু রায় এবং তার মায়ের এই আদর ভালোবাসা ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিকরা অমলেন্দু রায়ের বাড়িতে ছুটে গিয়েও দেখতে পায় সে তার মাকে কি ভাবে সেবা-যত্ন করছে। সত্যিই এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় হীরের টুকরো এই সন্তানদের দেখে যে কারুর তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে যাবে। এদিন সাংবাদিকদের সামনে অমলেন্দু রায় জানিয়েছেন তিনি মাকে যেভাবে সেবা যত্ন করছেন উনার মা কখনো অসুস্থ হয়নি যার ফলে কোন ঔষধ খাওয়াতে হয় না। অমলেন্দু রায় নিজের মাকে ছোট্ট সন্তানের মত করে এমন ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় রাখছেন যা কোন রোগ তার মাকে স্পর্শ করতে পারে না। অমলেন্দু রায় আরো জানিয়েছেন আজকাল এই শিক্ষিত সমাজের কিছু সন্তানরা একটু বড় হলেই তার মা-বাবাকে ভুলে যায়, কোন কোন সন্তান তার মা-বাবাকে নিজের স্বার্থের লোভে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়, তাই তিনি এই ধরনের সন্তানদের প্রতি বার্তা দিয়েছেন কেউ যেন তার মা-বাবার প্রতি এই ধরনের আচরণ না করে, মা-বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে সেবা যত্ন করলে যা আশীর্বাদ পাওয়া যায় তাতেই সংসার সুখে থাকে এতে ভগবানের কোন আশীর্বাদের প্রয়োজন হয় না, তাছাড়া মা-বাবাই হল এই পৃথিবীর প্রকৃত ভগবান। তাই তিনি মনে করেন কাল্পনিক ভগবানকে পূজা করার চেয়ে এই দুনিয়ার প্রকৃত ভগবান মা-বাবাকে পূজা করলেই তাদের থেকে প্রকৃত আশীর্বাদ পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে তাদের জন্য যে মা-বাবাদের কোন সন্তান নেই তারাই বৃদ্ধাশ্রমে যেতে পারে কিন্তু যে মা বাবার সন্তান রয়েছে তারা কেন বৃদ্ধাশ্রমে যাবে! তাই তিনি এই সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সকল সন্তানরা যেন আজ থেকে তাদের মা বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যত্নবান হয়। অতএব এখানে বলা চলে অমলেন্দু রায়ের কাছ থেকে এই সমাজের নিষ্ঠুর সন্তানদের অনেক কিছুই শেখার আছে।

0 মন্তব্যসমূহ