ককবরক ভাষায় রোমান হরফকে চালুর দাবিতে তিপ্রামথার ছাত্র সংগঠন টি এস এফ এর ডাকে রাস্তা অবরোধ আন্দোলনের জেরে গোটা রাজ্য জুড়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।রাজ্য জুড়ে ককবরক ভাষার লিপি হিসেবে রোমান হরফ স্বীকৃতি আদায়ে ২১ শে মার্চ থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছে তিপ্রা মথার ছাত্র সংগঠন টি এস এফ জাতীয় সড়ক অবরোধ কেন্দ্র করে ত্রিপুরার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নিয়ে আসে।খবরে প্রকাশ স্বল্প সময়ের এই নোটিশে সড়ক অবরোধের ফলে শিক্ষক পরীক্ষার্থী সহ অফিস কাছারি সহ রোগী এম্বুলেন্স সহ সবাই চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
এইবারই প্রথম এম্বুলেন্স সহ অতি দরকারি গাড়ি গুলোকে ও যেতে দেওয়া হয় নি।এর দায় কে নিবেন। যেহেতু রাজ্য সরকারের শরীক দলের সংগঠন এর শাখা এই অবরোধের ডাক দিয়েছে তাই এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তাছাড়া বিরোধী দল তথা সি পি এম নীরব ভূমিকা পালন করে নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ভোট ব্যাংকের স্বার্থে। আবার সুদীপ রায় বর্মণ পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এখন পর্যন্ত যতবারই বাঙালীদের উপর আক্রমণ হয়েছে বা আক্রান্ত কারীদের বিরুদ্ধে সব গুলো দল নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অথচ ত্রিপুরাতে এ ডি সি গঠন হয়েছে, উপজাতি কল্যাণ দপ্তর গঠন করা হয়েছে। প্রতি বছর শত শত কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এরপর ও কেন ওদের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি কিছু উপজাতি দরদী নেতা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আগরতলায় বিলাস বহুল বাড়ি বানিয়ে আরামদায়ক জীবন যাপন করছে।তারাই কিছু দিন পর পর উপজাতি মানুষদের নিয়ে আন্দোলন করছে এবং সরকার থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে নিচ্ছে। এবার ও তাদের প্ররোচনায় টি এস এফ আন্দোলন শুরু করেছে।ভাষার লিপি কি হবে তা নির্ধারণ করার প্রশ্নে আমরা বাঙালী দলের বক্তব্য হলো ভাষা বিশেষজ্ঞ সহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্ধারণ করা উচিত। কারণ নৃপেন চক্রবর্তী যখন ত্রিপুরাতে উপজাতিদের উন্নয়নে এ ডি সি গঠন করে তখন আমরা বাঙালী দল চরম বিরোধিতা করেছিল। আমরা বাঙালী দলের বক্তব্য ছিল তখন এডিসি গঠিত হলে জাতি উপজাতির মধ্যে যে সুসম্পর্ক আছে তা চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। তখন বামেরা ক্ষমতার জোরে গাঁয়ের জোরে এ ডি সি চালু করে। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে নৃপেন চক্রবর্তী উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে এ ডি সি গঠন তার জীবনের ভুল পদক্ষেপ ছিল।যে বামেরা একদিন বলতো এ ডি সি র ২০ টি সিট তাদের হাতের মুঠোয়। অথচ বামেরা উপজাতিদের উন্নয়নে বাঙালীদের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করে উপজাতিদের উন্নয়নে এত কিছু করে আজ এ ডি সি থেকে মুছে গেছে।ত্রিপুরাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হচ্ছে বাঙালী। এছাড়াও আরো ১৯ টি উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন আছে।এই উনিশটি সম্প্রদায়ের সকলের ভাষা ককবরক নয়। কিন্তু এই ঊনিশ টি জাতির বেশীরভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে এসেছে রাজ আমল থেকে।প্রত্যেকেই কম বেশি বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং পড়াশোনা করেছেন। আবার তাদের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ হলো ককবরক ভাষীর লোক। এই ককবরক ভাষার উন্নয়নে তাদের যেমন অবদান আছে তেমনি বহু বাঙালী লেখক এই ভাষার উন্নয়নে অংশীদার হয়েছেন। যেহেতু এই ভাষার শুরু থেকে বাংলা বর্ণমালা দিয়ে শুরু হয়েছে এতে বাঙালীদের যেমন তাদের ভাষা বুঝতে সুবিধা হয়েছে তেমনি তাঁরাও যেহেতু দীর্ঘ দিন ধরে বাংলা ভাষার সাথে পরিচিত তাই উভয়ের জন্যই সুবিধা হয়েছিলো। যেহেতু এই রাজ্যের কৃষ্টি সংস্কৃতি উৎসব সবাই একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলা ছিল ত্রিপুরা রাজাদের রাজ ভাষা ছিল বাংলা।১৯ টি উপজাতিদের সকলের ভাষা কিন্তু ককবরক না। অথচ এই বাংলা ভাষাতেই পড়াশোনা করে ও গান গেয়ে শচীন দেব বর্মন সহ আরো উপজাতি অংশের মানুষ আজ ত্রিপুরা সহ সারা ভারতবর্ষে গৌরব অর্জন করেন এবং বহুজন বহু বড় বড় পদে চাকরি করছেন। ত্রিপুরার রাজ রাজাদের রাজ মালা থেকে শুরু করে বহু মূল্যবান তথ্য বাংলা ভাষায় লেখা। তারা দেশ বিদেশে নিজেদের বাঙালী পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করতেন।ভারতবর্ষ সহ সারা বিশ্বে বহু ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে যাদের নিজস্ব কোন লিপি নেই।। অথচ তারা স্বাচ্ছন্দে অন্য ভাষার লিপি ব্যবহার করে নিজেদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। এমতাবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা বাংলা ভাষার সংস্পর্শে থেকে বাংলা লিপিকে বাদ দিয়ে কেন রোমান লিপির প্রতি তাদের আসক্তি তৈরী হলো বোধগম্য হচ্ছে না। আসলে আমাদের ধারণা তাদের নূতন প্রজন্মকে পুরোপুরি বাঙালীদের সব কিছু থেকে আলাদা করে দেওয়া।এর ফলে কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে সুসম্পর্ক আছে তা আরো ফাটল দেখা দেবে।যাই হোক সবদিক থেকে বিবেচনা করে ককবরক লিপি বিতর্কের সমাধানের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আজ অনেক চাকমা ছাত্ররা ও ককবরক ভাষার রোমান হরফ আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে। আমাদের প্রশ্ন তাদের ও নিজস্ব চাকমা ভাষা রয়েছে। তাছাড়া মণিপুরীদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে।কাজেই সরকার কে সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবার পাশ্ববর্তী রাজ্য অসমের অসমীয়া ভাষার লিপি বাংলা ভাষার বর্ণমালা মতো থাকাতে বাংলা ভাষাভাষীদের বুঝতে পড়তে অসুবিধা হয়না। সুদীর্ঘ সময় ধরে ভোটের জন্য এদের তোষণের ফলে শত অন্যায় করেও যেমন এদের শাস্তি হয়নি। বরং রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে এবং এরা যা চেয়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ভোট ব্যাংকের স্বার্থে সমর্থন করে গেছে। এই ভাবে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কারণে এবং বাম আমল থেকেই উপজাতিদের নাকি বাঙালীরা শোষণ করে আসছে প্রচার করে বাঙালী বিরোধী মানসিকতায় পরিণত করেছে।এরই অঙ্গ হিসেবে তারা দীর্ঘদিন ধরে ককবরক ভাষার লিপি রোমান হরফে আদায়ে আন্দোলন করে আসছে। আমরা চাই ত্রিপুরা রাজ্যের জাতি উপজাতি সবার কল্যাণ তথা পিছিয়ে পড়া প্রতিটি মানুষের উন্নয়ন চায় সে উপজাতি আর বাঙালী হোক। কারণ আমরা চাই প্রতিটি মানুষের ভাষা সংস্কৃতি কৃষ্টি শিক্ষা সাহিত্য ঐতিহ্যের উন্নয়ন।
0 মন্তব্যসমূহ