সাম্প্রতিক রিয়াং জনজাতি সম্পর্কিত মুখ্যমন্ত্রীর সত্য ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাঙালী দলের বক্তব্য।

 খবরে প্রকাশ গত ৮ ই অক্টোবর শান্তির বাজার মহকুমার বগাফা ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়ে রিয়াং জনগোষ্ঠীর ৩৩ তম হজগিরি অনুষ্ঠান উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সাহা মহোদয় বলেন যে ত্রিপুরার জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে রিয়াং রা দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর লোকেরা বহু আগেই বর্তমান বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এই রাজ্যে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সত্য ভাষণের পর রিয়াং জনগোষ্ঠীর একটি অংশ গো ব্যাক বাংলাদেশী বলে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। মাণিক সাহা তো এই কথা বলেননি যে রিয়ং রা বাংলাদেশ থেকে এসেছে বহু আগেই এই রাজ্যে এসেছে বলেছে।এর মধ্যে দোষের কি আছে। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশী বলে গো ব্যাক শ্লোগান দিচ্ছে। আর যারা বাঙালীদের বলছে প্রতিনিয়ত গো ব্যাক বাংলাদেশী বলে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে তখন তো তাদের কোন নেতৃত্ব বা শিক্ষিত লোকেরা প্রতিবাদ করে না। অথচ সমতল ত্রিপুরায় পার্বত্য ত্রিপুরায় বাঙালী প্রজারা ছিল বরাবরই সংখ্যাগরিষ্ঠ ত্রিপুরার রাজপরিবারের প্রজা। রাজপরিবারের অর্থের যোগান দিত  এই বাঙালী প্রজারাই। বাঙালী প্রজাদের অর্থেই এই রাজ্যের উন্নয়ন হয়েছে ও রাজকার্য চলছে।রাজপরিবারের লোকেদের আয়ের উৎস ছিল এই সমতল ত্রিপুরা । দেশভাগের পর রাজপরিবারের লোকেরা ভারতের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রাজন্যভাতা  পাওয়া শুরু করে। অথচ সমতল ত্রিপুরার বাঙালী প্রজাদের রক্ষার জন্য তাদের কোন সদর্থক ভূমিকা ছিল না। কারণ শাসক তার প্রজাকে রক্ষা করবে এটাই রাজধর্ম। 


দেশভাগের আগে অর্থাৎ ১৯৩১ সালের জনগণণার সময়েও পার্বত্য ত্রিপুরায় বাঙালীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ত্রিপুরার রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী নিজেই বলছেন চট্রগ্রাম, নোয়াখালী কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ আরো বেশকিছু এলাকা নিয়েই ছিল ত্রিপুরা রাজপরিবারের শাসনাধীন।  সেহেতু  দেশভাগের সাথে সাথে এই রাজ্যে বহু বাঙালী প্রজা সহ বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীর লোকেরাও পার্বত্য ত্রিপুরায় চলে আসে।একেই রাজপরিবারের প্রজা বাঙালীরা হয় গেল শরণার্থী বাংলাদেশী।আর যে সকল উপজাতিরা এসেছে যেমন চাকমা মগ ইত্যাদি তারা হয়ে গেল ভূমিপুত্র।রাজ আমল থেকেই বাঙালী ও উপজাতি প্রজাদের সংমিশ্রণে এই রাজ্যের শাসন চলছে সুদীর্ঘ সময় ধরে। রিয়াং জনগোষ্ঠীর লোকেরা রাজ আমলে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এবং এবং এদের রায় উপাধি ছিল বিশেষ সন্মানের।মাণিক্য শাসনামলেই রিয়াং জনগোষ্ঠীর একটি অংশ এই রাজ্যে চলে আসে। শুধু ত্রিপুরার মধ্যেই রিয়াং জনগোষ্ঠীর লোকেরা সীমাবদ্ধ ছিল না আসাম মিজোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন অঞ্চলেও তাদের বাস ছিল এবং এখনও আছে। দেশভাগের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যেমন বহু উপজাতি অংশের লোকেরা ধীরে ধীরে ত্রিপুরার মধ্যে এসেছে এবং এখনও মাঝে মাঝে আসে। কয়েক বছর আগে মিজোরাম থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রায় চল্লিশ হাজারের মতো রিয়াং সম্প্রদায়ের লোকজন এসেছে। এই নিয়ে বাঙালীরা কোন আপত্তি করেনি।অথচ  বাঙালীদের  একটা অংশ একেই কারণে পার্বত্য ত্রিপুরায় আসে। আর এই বাঙালীদের দৈহিক শ্রম ও আর বৌদ্ধিক শ্রমেই এই পার্বত্য ত্রিপুরা আজ আধুনিক ত্রিপুরায় গড়ে উঠেছে। তাছাড়া ও যে রাজপরিবারের লোকেরা দাবি করেন ১৮৪ জন রাজা এই ত্রিপুরায় রাজত্ব করেছেন বলে ধরা হয়  তাহলে দেখা যায় রাজন্য আমলে উপজাতিদের অবস্থা ছিল খুবই করুন। রাজ আমলে উপজাতিরা ছিল উপেক্ষিত।রাজ আমলে উপজাতিরা উপেক্ষিত থাকার কারণে ত্রিপুরার রাজপরিবারের বিরুদ্ধে রিযাং বিদ্রোহ, কুকি বিদ্রোহ সহ অনেক বিদ্রোহ হয়েছে।রাজ আমলে উপজাতি অংশের লোকদের শরীর ঢাকবার মতো বস্ত্র পর্যন্ত ছিল না  ঠিক করে। লেখাপড়ায় পিছিয়ে ছিল হাতে গোনা কয়েকজন উপজাতি অংশের লোক ছিল শিক্ষিত।অথচ এই রাজ্যে দেশভাগের কারণে কিছু বাঙালীরা পার্বত্য ত্রিপুরায় এসে ত্রিপুরার বন জঙ্গল পরিষ্কার করে কৃষি কাজ শুরু করে পার্বত্য ত্রিপুরা উন্নয়ন করে,আর বাঙালী প্রজাদের সংস্পর্শে এসে উপজাতি অংশের লোকেরাও শিক্ষা দীক্ষায় উন্নতি হবার ফলে আজকে ত্রিপুরার জাতি উপজাতি উভয় অংশের লোকেরা ত্রিপুরাকে আধুনিক ত্রিপুরায় পরিণত করেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ত্রিপুরার উপজাতি অংশের লোকেরা বাঙালীদের উপর গুরুমারা বিদ্যা প্রয়োগ করার জন্য প্রতিনিয়ত গো ব্যাক বাংলাদেশী বলছে। বাঙালীরা নাকি বিদেশী বাংলাদেশী। অথচ প্রতিটি রাজনৈতিক দল জানে বাঙালীরা এই রাজ্যের ভূমিপুত্র। হাজার হাজার বছর ধরে এই বাঙালীরা বাস করছে। অথচ শুধু ভোট ব্যাংকের রাজনীতি ও দেশ ভাগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই অপপ্রচার করছে।আর মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সাহা রিয়াং রাও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এসেছে বলাতে গো ব্যাক বাংলাদেশী মাণিক সাহা।  তাই তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই শুরু হয়ে যায় গো ব্যাক বাংলাদেশী শ্লোগান।রাজ উত্তরাধিকারী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন  তাদের মাতৃভাষা হলো সাইনো তিব্বতি ভাষা।The Sino Tibetan language family is ancient, with it's origins believed in China. অপরদিকে The Reang (or Bru) community originated from the shan state in Upper Burma (now Mynamer). The Route They moved through the Chitagong Hill tracts and then migrated to southern tripura.এখন আপনি গুগল সার্চ করলেই জানতে পারবেন কে কোথাকার আদিবাসী। আমরা বাঙালী দল মনে করে রাজ আমল থেকেই বাঙালী ও ত্রিপুরার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোকেরা একত্রে বাস করে আসছি সুদীর্ঘ সময় ধরে। আমরা এখন সবাই ত্রিপুরা বাসী।একে অপরের প্রতিপক্ষ নয় একে অপরের পরিপূরক। আমরা বাঙালী দল বিশ্বাস করে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের আমরা মানুষ। ভৌগলিক কারণে হোক আর জাতিগত কারণেই চেহারা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা এখন ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণ। পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে এই রাজ্যের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসে কাজ করা উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ